নওগাঁ : জেলার নওগাঁর মান্দা থানা উপজেলার সতিহাট বাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছে থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগে গনেশপুর ইউনিয়ন যুবলীগের দুই নেতা ও এক ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) দুুপুরে সতিহাট বাজার এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার মান্দা থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- গনেশপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম (৪০), স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক সোহেল রানা (৪২) ও ছাত্রলীগ কর্মী সাগর হোসেন (২৪)।
ভবন নির্মাণে বাঁধা, প্রাণনাশের হুমকি ও মারপিটসহ চাঁদা দাবির অভিযোগে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর ও সোহেলের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে গত সোমবার বিকেলে মান্দা থানায় অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রসাদপুর ইউনিয়নের চকরাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম সতিহাট বাজারের শহিদ মিনার সংলগ্ন এলাকায় সড়কের পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে দোকানঘর নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছিলেন। সম্প্রতি দোকানঘরটি সম্প্রসারণ করার জন্য আগের ঘরটি ভেঙে ফেলে নতুনভাবে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি।
কাজ শুরুর পর থেকে গনেশপুর ফকিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানা, একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমসহ সংঘবদ্ধ একটি চক্র চাঁদা দাবি করে আসছিল। সোমবার সকালে সোহেল, জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের লোক ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। এ সময় তাঁরা ব্যবসায়ী রেজাউলের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে না চাওয়ায় ব্যবসায়ী রেজাউলকে ধাক্কা দিয়ে ভবনের ভিত তৈরির জন্য করা গর্তের মধ্যে ফেলে দেন।
এ সময় তাদেরকে বাঁধা দিতে গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ফারুক হোসেনকে মারধর করে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর ও তার লোকজন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সতিহাট বাজার এলাকা থেকে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম, সোহেল রানা ও তাদের সহযোগী সাগরকে গ্রেপ্তার করে মান্দা থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান জানান, ভবন নির্মাণকাজে বাধা, মারপিট ও চাঁদা দাবির অভিযোগে সতিহাট বাজারের এক ব্যবসায়ী গতকাল সোমবার থানায় অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এজহারভুক্ত দুই আসামি জাহাঙ্গীর ও সোহেলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে ওই ব্যবসায়ীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রতিবেদক সতিহাট বাজারে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান এবং অভিযোগকারী ব্যবসায়ীসহ ওই বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু অভিযোগকারী ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম নয় ওই বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করতে গেলে, নতুন ভবন নির্মাণ করতে গেলে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর ও সোহেলের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি চাঁদা আদায় করেছেন।
মিরাজ উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ‘ছয়-সাত মাস আগে জাহাঙ্গীর, সোহেল তার লোকজন আমার কাছে চাঁদা দাবি করেন। প্রথমে চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা আমার দোকানে তালা মেরে দেন। পরে তাদেরকে ২০ হাজার টাকা দিতে তারা আমার দোকানের তালা খুলে দেন। তারা বাজারের আরও অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছেন। আমরা এর থেকে রেহাই চাই।’
নাজমুল হক নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘দেড় বছর আগে বাজারে দোকানঘরের জন্য একটি ভবন তৈরির কাজ শুরু করি। সে সময় সময় জাহাঙ্গীর ও সোহেল আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে না চাওয়ায় আমাদের কাজ বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি। পরে তাঁদেরকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করি।’
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সতিহাট বাজার এলাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলার সময় যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর ও সোহেল রানা সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা দাবি করেন, ব্যবসায়ী রেজাউল যে অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। অতিতেও তাঁরা কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোনো চাঁদাবাজি করেননি।
গনেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হানিফ উদ্দিন বলেন, ‘জাহাঙ্গীর ও সোহেলের অত্যাচারে সতিহাট বাজারের ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ।তাদের অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে একাধিকবার কথা বলেছি, তাদেরকে সাবধান করেছি। কিন্তু তারা তারপরেও এ ধরনের অন্যায় কাজ করে চলেছে। তারা গ্রেপ্তারের হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। আমার দাবি, তারা যে দলের লোক হোক না কেন তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়। তাঁদের আর যাঁরা সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক রয়েছেন তাঁরাও যেন গ্রেপ্তার হয় এবং সাজা হয়।’
আগামীনিউজ/মালেক